ওয়েব মেইন্টেন্স এর কাজ চলতেছে

#ওয়েব মেইন্টেন্স এর কাজ চলতেছে । সকলকের কাছে আন্তরিক দুঃখ জানাইতেছি।

হে হৃদয় - জীবনানন্দ দাশ

হে হৃদয়
- জীবনানন্দ দাশ


হে হৃদয়
নিস্তব্ধতা?
চারিদিকে মৃত সব অরণ্যেরা বুঝি?
মাথার ওপরে চাঁদ
চলছে কেবলি মেঘ কেটে পথ খুঁজে-


পেঁচার পাখায়
জোনাকির গায়ে
ঘাসের ওপরে কী যে শিশিরের মতো ধূসরতা
দীপ্ত হয় না কিছু?
ধ্বনিও হয় না আর?


হলুদ দু’-ঠ্যাং তুলে নেচে রোগা শালিখের মতো যেন কথা
ব’লে চলে তবুও জীবনঃ
বয়স তোমার কত? চল্লিশ বছর হল?
প্রণয়ের পালা ঢের এল গেল-
হল না মিলন?


পর্বতের পথে-পথে রৌদ্রে রক্তে অক্লান্ত শফরে
খচ্চরে পিঠে কারা চড়ে?
পতঞ্জলি এসে ব’লে দেবে
প্রভেদ কী যারা শুধু ব’সে থেকে ব্যথা পায় মৃত্যর গহ্বরে
মুখে রক্ত তুলে যারা খচ্চরের পিঠ থেকে পড়ে যায়?


মৃত সব অরণ্যেরা;
আমার এ-জীবনের মৃত অরণ্যেরা বুঝি বলেঃ
কেন যাও পৃথিবীর রৌদ্র কোলাহলে
নিখিল বিষের ভোক্তা নীলকন্ঠ আকাশের নীচে
কেন চ’লে যেতে চাও মিছে;
কোথাও পাবে না কিছু;
মৃত্যুই অনন্ত শান্তি হয়ে
অন্তহীন অন্ধকারে আছে
লীন সব অরণ্যের কাছে।
আমি তবু বলিঃ
এখনও যে-ক’টা দিন বেঁচে আছি সূর্যে-সূর্যে চলি,
দেখা যাক পৃথিবীর ঘাস
সৃষ্টির বিষের বিন্দু আর
নিষ্পেষিত মনুষ্যতার
আঁধারের থেকে আনে কী ক’রে যে মহা-নীলাকাশ,
ভাবা যাক—ভাবা যাক-
ইতিহাস খুঁড়লাই রাশি-রাশি দুঃখের খনি
ভেদ ক’রে শোনা যায় শুশ্রুষার মতো শত-শত
শত জলঝর্ণার ধ্বনি।



কাব্যগ্রন্থ - বেলা অবেলা কালবেলা

চিঠি দিও - মহাদেব সাহা

চিঠি দিও 
- মহাদেব সাহা---কী সুন্দর অন্ধ

করুণা করে হলে চিঠি দিও, খামে ভরে তুলে দিও
আঙুলের মিহিন সেলাই
ভুল বানানেও লিখো প্রিয়, বেশি হলে কেটে ফেলো তাও,
এটুকু সামান্য দাবি চিঠি দিও, তোমার শাড়ির মতো
অক্ষরের পাড়-বোনা একখানি চিঠি।
চুলের মতন কোনো চিহ্ন দিও বিস্ময় বোঝাতে যদি চাও
সমুদ্র বোঝাতে চাও, মেঘ চাও, ফুল, পাখি, সবুজ পাহাড়
বর্ণনা আলস্য লাগে তোমার চোখর মতো চিহ্ন কিছু দিও!
আজো তো অমল আমি চিঠি চাই, পথ চেয়ে আছি
আসবেন অচেনা রাজার লোক
তার হাতে চিঠি দিও, বাড়ি পৌঁছে দেবে।
এক কোণে শীতের শিশির দিও একফোঁটা, সেন্টের শিশির চেয়ে
তৃণমূল থেকে তোলা ঘ্রাণ
এমন ব্যস্ততা যদি শুদ্ধ করে একটি শব্দই শুধু লিখো, তোমার কুশল!
ওই তো রাজার লোক যায় ক্যাম্বিসের জুতো পায়ে,কাঁধে ব্যাগ,
হাতে কাগজের একগুচ্ছ জীজন ফ্লাওয়ার
কারো কৃষ্ণচূড়া, কারো উদাসীন উইলোর ঝোপ, কারো নিবিড় বকুল
এর কিছুই আমার নয় আমি অকারণ
হাওয়ায় চিৎকার তুলে বলি, আমার কি কোনো কিছু নাই?
করুণা করেও হলে চিঠি দিও, ভুলে গিয়ে ভুল করে একখানি চিঠি
দিও খামে
কিছুই লেখার নেই তবু লিখো একটি পাখির শিস
একটি ফুলের ছোটো নাম,
টুকিটাকি হয়তো হারিয়ে গেছে কিছু হয়তো পাওনি খুঁজে
সেইসব চুপচাপ কোনো দুপুরবেলার গল্প
খুব মেঘ করে এলে কখনো কখনো বড়ো একা লাগে, তাই লিখো
করুণা করেও হলে চিঠি দিও, মিথ্যা করে হলে বলো, ভালোবাসি।

হেমন্ত | সুফিয়া কামাল

হেমন্ত
-সুফিয়া কামাল
সবুজ পাতার খামের ভেতর
হলুদ গাঁদা চিঠি লেখে
কোন্ পাথারের ওপার থেকে
আনল ডেকে হেমন্তকে?
আনল ডেকে মটরশুঁটি,
খেসারি আর কলাই ফুলে
আনল ডেকে কুয়াশাকে
সাঁঝ সকালে নদীর কূলে।
সকাল বেলায় শিশির ভেজা
ঘাসের ওপর চলতে গিয়ে
হাল্কা মধুর শীতের ছোঁয়ায়
শরীর ওঠে শিরশিরিয়ে।
আরও এল সাথে সাথে
নুতন গাছের খেজুর রসে
লোভ দেখিয়ে মিষ্টি পিঠা
মিষ্টি রোদে খেতে বসে।
হেমন্ত তার শিশির ভেজা
আঁচল তলে শিউলি বোঁটায়
চুপে চুপে রং মাখাল
আকাশ থেকে ফোঁটায় ফোঁটায়।

স্বদেশ | আহসান হাবীব

 স্বদেশ    
-আহসান হাবীব

এই যে নদী
নদীর জোয়ার
নৌকা সারে সারে,
একলা বসে আপন মনে
বসে নদীর ধারে
এই ছবিটি চেনা।
মনের মধ্যে যখন খুশি
এই ছবিটি আঁকি
এক পাশে তার জারুল গাছে
দু’টি হলুদ পাখি,এমনি পাওয়া এই ছবিটি
কড়িতে নয় কেনা।
মাঠের পরে মাঠ চলেছে
নেই যেন এর শেষ
নানা কাজের মানুষগুলো
আছে নানান বেশ,
মাঠের মানুষ যায় মাঠে আর
হাটের মানূষ হাটে,
দেখে দেখে একটি ছেলের
সারাটাদিন কাটে।
এই ছেলেটির মুখ
সারাদেশের সব ছেলেদের
মুখেতে টুকটুক।
কে তুমি ভাই,
প্রশ্ন করি যখন,
ভালবাসার শিল্পী আমি,
বলবে হেসে তখন।
এই যে ছবি এমনি আঁকা
ছবির মত দেশ,
দেশের মাটি দেশের মানুষ
নানান রকম বেশ,
বাড়ি বাগান পাখ-পাখালি
সব মিলে এক ছবি,
নেই তুলি নেই রং তবুও
আঁকতে পারি সবই।